বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও সহিংসতার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের পর এবার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে জাতিসংঘ।
প্রতিক্রিয়ায় কোটা আন্দোলনকারীদের প্রতি সমর্থন জানানোর পাশাপাশি সহিংস হামলা থেকে শিক্ষার্থীদের রক্ষার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছে সংস্থাটি।
বাংলাদেশে চলমান ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘ বলছে, মানুষের শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করার অধিকার আছে এবং সরকারকে সেই অধিকার রক্ষা করতে হবে।
বুধবার (১৭ জুলাই) জাতিসংঘের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক।
এদিনের ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক স্টিফেন ডুজারিকের সামনে প্রশ্ন রাখেন, বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে তথাকথিত কোটা পদ্ধতির পরিবর্তে মেধাভিত্তিক নিয়োগ ব্যবস্থার দাবিতে দেশব্যাপী বিক্ষোভ চলছে। সরকারের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ ও পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। হামলায় শিক্ষার্থীসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘের মহাসচিব কি এই পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত আছেন?
জবাবে ডুজারিক বলেন, হ্যাঁ। আমরা বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে খুব ভালোভাবে অবগত আছি। আমরা উদ্বেগের সঙ্গে সার্বক্ষণিক পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছি।
জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র আরও বলেন, আমি মনে করি- বাংলাদেশে হোক বা বিশ্বের অন্য কোথাও, মানুষের শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করার অধিকার রয়েছে এবং যেকোনো ধরনের হুমকি বা সহিংসতা থেকে শিক্ষার্থীদের রক্ষা করার জন্য আমরা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই। বিশেষ করে যুবক বা শিশু বা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মতো যাদের অতিরিক্ত সুরক্ষার প্রয়োজন হতে পারে, যেন তারা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করতে পারে।
প্রসঙ্গত, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে দেড় সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সবশেষ গত রোববার এ আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এক প্রতিক্রিয়ার প্রেক্ষিতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে আন্দোলনকারীরা। রোববার রাত থেকে তীব্র প্রতিবাদ শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরদিন সোমবার দুপুর থেকে আবারও বিক্ষোভ শুরু হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কারপন্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় ছাত্রলীগ। বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত থেমে থেমে চলা সংঘর্ষে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। রাত ১০টার পর আন্দোলনকারীরা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন এবং সারা দেশের সব পর্যায়ের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে তাদের সমর্থনে রাস্তায় নামার আহ্বান জানান।
এরপর মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে রাজধানীর ১৫ থেকে ২০টি স্থানে একযোগে সড়ক অবরোধ শুরু করেন বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অবরোধে গোটা রাজধানী অচল হয়ে পড়ে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, বগুড়াসহ দেশের প্রায় সর্বত্র শিক্ষার্থীরা সড়কে নেমে আসেন। দুপুরের পর থেকে ঢাকার সায়েন্সল্যাব ও চানখারপুল এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে ছয়জন নিহত হয়েছেন। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পরে রাজধানী ঢাকাসহ চার জেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়।