টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে রাতে মুখোমুখি হবে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড আর শিরোপার অন্যতম দাবিদার ভারত। দ্বিতীয় সেমিফাইনালটি যেন গত আসরের পুনরাবৃত্তি। অ্যাডিলেড ওভালে গত আসরে ভারতকে যেন পাত্তাই দেয়নি জশ বাটলারের দল। ভারতকে ১০ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে ইংলিশরা পৌঁছে যায় ফাইনালে। তাইতো এই ম্যাচ ভারতের জন্য প্রতিশোধেরও। অন্যদিকে, অ্যাডিলেডের সেই সেমি-ফাইনালের স্মৃতিকে সঙ্গী করেই নামবে ইংল্যান্ড।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টায় শুরু হবে ম্যাচটি। ২০০৭ সালে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারত। এরপর আর তারা সেরা হতে পারেনি। অন্যদিকে, ইংল্যান্ড টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন। এই দল দু’টি এবার আরেক সেমিতে মুখোমুখি হচ্ছে।
এবারের বিশ্বকাপে অপরাজিত দল হিসেবে সেমিফাইনালে উঠেছে ভারত। এখনও পর্যন্ত সাত ম্যাচের ছয়টিতে জিতে ভালো ছন্দে আছে ম্যান ইন ব্লু’রা। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি ছাড়া জয়ের জন্য সেভাবে তাদের বেগ পেতে হয়নি কোনো ম্যাচে। তবে ভুলে গেলে চলবে না, যেকোনো বৈশ্বিক আসরেই নক আউট পর্বের আগ পর্যন্ত ভারতের এই দোর্দণ্ড প্রতাপে ছড়ি ঘোরানো এটা একটা নৈমিত্তিক ব্যাপার। কিন্তু সেমিফাইনাল কিংবা ফাইনালে পৌঁছানো মাত্রই বড় হোঁচট খায় দলটি।
টপ অর্ডারের রান ক্ষরা অনেকটা কেটেছে সবশেষ ম্যাচে রোহিত শর্মার ৯২ রানের বিস্ফোরক এক ইনিংসে। তবে শক্তিশালি ইংলিশদের বিপক্ষে ভিরাট কোহলির ব্যাটে খুব করে রান চায় ভারত। তবে বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে ভারতের মূলশক্তি হতে পারে বোলিং। বুমরাহ, আর্শ্বদীপ, পান্ডিয়া, কুলদীপ, আক্সাররা আছেন দারুণ ছন্দে।
শেষ ১০ বছরে দু’টি টেস্ট চাম্পিয়ানশিপের ফাইনালে উঠলেও ট্রফি জিততে পারেনি ভারত। আর শেষ চারটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দুটি সেমিফাইনাল এবং একটি ফাইনাল খেলেছে ভারত, কিন্তু ট্রফি হাতে নিতে পারেননি কোহলি-রোহিতরা।
পরিসংখ্যান বলছে বড় মঞ্চে ভারতের ব্যর্থতার অন্যতম জায়গা হল নক আউট। গ্রুপ পর্বে ভারত চূড়ান্ত সাফল্য পেলেও নক আউট পর্বে ভেঙে পড়েছে। গত বছরের কথাই ধরা যাক। ঘরের মাটিতে ওয়ানডে বিশ্বকাপে লিগ পর্বের ৯টি ম্যাচের মধ্যে ৯টিই জিতে সেমিফাইনালে পৌঁছেছিল ভারত। এরপর সেমিফাইনাল জিতে ফাইনালে উঠলেও অস্ট্রেলিয়ার কাছে স্বপ্নভঙ্গ হয় রোহিতদের।
ভারত অপ্রতিরোধ্য হয়ে ছুটলেও ইংল্যান্ডের অবস্থা ছিল উল্টো। একটা পর্যায়ে গ্রুপ প্ররব থেকেই ছিটকে পড়ার অবস্থায় ছিল বাটলারের দল। ভাগ্য অনেকটা ঝুলছিল সুতোয়। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে সেমি-ফাইনাল নিশ্চিত করেছে তারা সবার আগে। এমনিতে সেমি-ফাইনালের মতো ম্যাচে সাধারণত কোনো এক দলকে ফেভারিট বলা কঠিন।
ভারত-ইংল্যান্ডের মতো দুই দলের লড়াইয়ে কাউকে এগিয়ে রাখাও যায় না হয়তো। তবে ভারত যেভাবে ছুটে চলেছে, তাদেরকে থামানোটা যেকোনো দলের জন্যই হবে বড় চ্যালেঞ্জ। তবুও শিরোপার অন্যতম দাবিদার ইংলিশরা। জশ বাটলার- ফিল সল্টের ব্যাটে স্বপ্ন দেখছে ইংলিশরা। জনি বেয়ারস্টো, হ্যারি ব্রুকরাও সেরা ছন্দের খোঁজে। স্পিন অপশন বাড়াতে স্কোয়াডে দলে জায়গা হতে পারে উইল জ্যাকসের।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আজ পর্যন্ত কোনো দলই টানা দ্বিতীয়বার শিরোপা জিততে পারেনি। আর দুটো ধাপ পেরোলেই বিরল সেই কীর্তি গড়বে ইংল্যান্ড। আর নক আউট পর্বে এসে খেই হারানোর পুরোনো রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার লড়াই ভারতের। ২০১১ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতার পর এখন পর্যন্ত কোনো বিশ্বকাপ শিরোপা জেতেনি দলটি। শেষ দুটো পরীক্ষায় রোহিতরা বাধাহীনভাবে উড়তে পারেন কি না সেটাই এখন দেখার।
এদিকে, গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচটি ঘিরে শঙ্কা আছে বৃষ্টির। প্রথম সেমিফাইনালে রিজার্ভ ডে থাকলেও দ্বিতীয় সেমিফাইনালে সেটি রাখা হয়নি। মূলত দ্বিতীয় সেমিফাইনাল ও ফাইনালের মাঝে বিরতি কেবল একদিনের। ম্যাচ রিজার্ভ ডেতে গড়ালে জয়ী দলকে খেলতে হবে টানা দুই দিন। সেই পথে কোনও দলকে ঠেলে দিতে চায়নি আইসিসি।
ম্যাচের আগের দিনে আধাবেলা বৃষ্টি হয়েছে গায়ানায়। বৃহস্পতিবারও বৃষ্টির সম্ভাবনা প্রবল। ম্যাচ চলাকালীন সময় বৃষ্টির সম্ভাবনা ৮৭%। যে মাঠে খেলা, সেখানকার পানি নিষ্কাষণ ব্যবস্থাও খুব ভালো নয়। রিজার্ভ ডে না থাকলেও আইসিসি চেষ্টা করবে যতটা সময় লাগুক, আজকে ম্যাচের ফলটা বের করতে। নির্ধারিত সময়ের বাইরে মোট ২৫০ মিনিট বাড়তি সময় রাখা হয়েছে। বাড়তি সময়েও ম্যাচ শেষ না করা গেলে সুপার এইট পর্বে গ্রুপে এগিয়ে থাকায় ভারত চলে যাবে ফাইনালে।